মহেশপুরে ৫৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের ১০ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

ঝিনাইদহের সীমান্তবর্তী উপজেলা মহেশপুরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর ৫৮ ব্যাটালিয়নের ১০ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
এক সময় এই স্থানটি ছিল জনবিচ্ছিন্ন, ঝোপঝাড়ে ঘেরা পতিত ভূমি। বর্তমানে বিজিবির সাহসী সদস্যদের অবিরাম প্রচেষ্টায় সেই এলাকা রূপ নিয়েছে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত ব্যাটালিয়নে।
ব্যাটালিয়নের প্রতিষ্ঠার সূচনা ঘটে ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি। বিডিআর পুনর্গঠনের প্রেক্ষাপটে কুষ্টিয়া সেক্টর কমান্ডারের সভাপতিত্বে নতুন ব্যাটালিয়ন স্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। প্রাথমিক প্রস্তাবে তিনটি সম্ভাব্য স্থানের মধ্যে ঝিনাইদহের খালিশপুর অঞ্চলকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
বিজ্ঞাপন
পরবর্তীতে ২০১৩ সালের ৮ এপ্রিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সীমান্ত শাখা-১ বর্তমান ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের অনুমোদন দেয়। জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ১৩.৯৩ একর ব্যক্তিমালিকানাধীন এবং ১১ একর সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে ব্যাটালিয়নের কার্যক্রম শুরু করার প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়।
২০১৪ সালের ৯ জুলাই অস্থায়ী টিনসেড ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যাটালিয়নের কার্যক্রম শুরু হয়। একই বছরের ১৪ জুলাই বিজিবির রিজিয়ন কমান্ডার হাবিবুল করিম ব্যাটালিয়নের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরে ২০১৫ সালের ১ নভেম্বর তৎকালীন বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহম্মেদ আনুষ্ঠানিকভাবে ৫৮ বিজিবির পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে এর উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
এ সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ-পশ্চিম রিজিয়নের কমান্ডার, সেক্টর কমান্ডার, জেলা প্রশাসকসহ স্থানীয় বিশিষ্টজনেরা।
বিজ্ঞাপন
ব্যাটালিয়নের প্রথম অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন লে. কর্নেল তাজুল ইসলাম। পরবর্তীতে একে একে দায়িত্ব পালন করেন লে. কর্নেল জিল্লুর রহমান, লে. কর্নেল কামরুল আহসান, লে. কর্নেল শাহিন আজাদ, লে. কর্নেল মাসুদ পারভেজ রানা এবং লে. কর্নেল আজিজুস শহীদ।
বর্তমানে (২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে) দায়িত্বে আছেন লে. কর্নেল মো. রফিকুল আলম। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই তিনি ব্যাটালিয়নের কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করেছেন।
২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে ৫৮ বিজিবি ব্যাটালিয়ন সীমান্ত নিরাপত্তা ও অপরাধ দমন অভিযানে প্রশংসনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। এই সময়ের মধ্যে মানব চোরাচালানের সময় ২ হাজার ৮১৯ জন বাংলাদেশি নাগরিক আটক করা হয়, ১৮ জন ভারতীয় নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয় এবং মানবপাচারকারী হিসেবে ৩৭ জনকে আইনের আওতায় আনা হয়।
বিজ্ঞাপন
ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল রফিকুল আলম বলেন, মাদক ও চোরাচালান দমনে ৫৮ বিজিবি সবসময় কঠোর অবস্থানে আছে। সীমান্তে বিজিবির তৎপরতা শুধু অপরাধ দমন নয়, বরং স্থানীয় জনগণের নিরাপত্তা ও আস্থার প্রতীক হিসেবে কাজ করছে।
এর আগে ব্যাটালিয়নের সাবেক অধিনায়ক লে. কর্নেল মাসুদ পারভেজ রানা’র নেতৃত্বে মানবপাচার, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও সীমান্ত নিরাপত্তায় বিশেষ সাফল্য অর্জিত হয়। তাঁর নেতৃত্বে পরিচালিত বিশেষ অভিযান, নিয়মিত টহল ও গোয়েন্দা কার্যক্রমের ফলে সীমান্ত এলাকায় মাদক ও চোরাচালান কার্যক্রম উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসে।
বিজ্ঞাপন
তার দক্ষ নেতৃত্বে ব্যাটালিয়নের সদস্যদের মনোবল, পেশাগত দক্ষতা ও শৃঙ্খলা বহুগুণে বৃদ্ধি পায়।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ৫৮ বিজিবি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। সরকারি ছুটির কারণে মূল অনুষ্ঠানটি ২ নভেম্বর তারিখে অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, সাংবাদিক, গণ্যমান্য ব্যক্তি ও ব্যাটালিয়নের সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন।
দশ বছরের এই গৌরবময় যাত্রায় ৫৮ বিজিবি মহেশপুর ব্যাটালিয়ন শুধু সীমান্ত রক্ষার দায়িত্বই পালন করেনি, বরং সীমান্ত এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, জননিরাপত্তা ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডেও রেখেছে অনন্য ভূমিকা। পতিত জঙ্গল থেকে আজ দৃষ্টিনন্দন ও কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই ব্যাটালিয়ন স্থাপনা সীমান্ত নিরাপত্তায় এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে, যা ভবিষ্যতেও দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
বিজ্ঞাপন








