সন্তানের স্বীকৃতি পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছে শিশু শাহাদাত

লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে সন্তানের স্বীকৃতি পেতে আদালতসহ প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন এক মা ও তার শিশু সন্তান। তবুও মিলছে না ন্যায়বিচার ও বাবার কাছে প্রাপ্য সন্তানের হক। স্বীকৃতি পেতে মা শাহিনুর বেগম বাদি হয়ে আব্বাস উদ্দীন রতনকে আসামি করে মামলা করেন।
বিজ্ঞাপন
জেলা জজ আদালতের বিচারক মো: শাহীন উদ্দীন আপীল মামলাটি গ্রহণ করে আগামী ২৬ নভেম্বর শুনানির দিন ধার্য্য করেছেন।
মামলার বাদি শাহিনুর আক্তার রায়পুর উপজেলার উত্তর চরবংশী ইউপির বংশীব্রীজ এলাকার আইয়ুব আলীর মেয়ে। অভিযুক্ত আব্বাস উদ্দীন রতন রায়পুর পৌরসভার নতুনবাজার এলাকার বাসিন্দা ও কৃষি ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত সাবেক কর্মকর্তা।
স্থানীয়রা জানায়, রায়পুরের উত্তর চরবংশী ইউপির বংশী ব্রিজ এলাকার আইয়ুব আলীর মেয়ে শাহীনুর। ২০০০ সালের ৩ মার্চ ছিল ১০ বছরের কিশোরী। ওই সময় চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে শাহিনুরকে জোড়পূর্বক বাল্য বিয়ে দেন তার পিতা-মাতা। দুই মাস পর তাদের দাম্পত্য কলোহ সৃষ্টি হলে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়।
বিজ্ঞাপন
২০০২ সালে শাহীনুর বেগমের সঙ্গে নতুন বাজার এলাকার বাসিন্দা মৃত আবদুল লতিফ ভুঁইয়ার ছেলে রায়পুরের সাবেক কৃষি ব্যাংক কর্মকর্তা আব্বাস উদ্দিন রতনের পরিচয়ের সুবাধে তার বাসায় গৃহকর্মীর কাজে নেয়। বাসায় কাজ করাকালীন সময়ে শাহীনুরের ওপর কুদৃষ্টি পড়ে আব্বাস উদ্দিন রতনের। বিভিন্ন সময়ে জোরপূর্বক মেলামেশা করার চেষ্টা করতো সে, সফল হতে না পেরে গোপনে নতুন বাজার জামে মসজিদের ঈমামকে দিয়ে বিয়ে করেন দুজনে। বিয়ে করলেও চতুর আব্বাস উদ্দিন রতন তাদের কাবিন করেননি। কিছুদিন পর শাহিনুর আক্তারের শারীরিক পরিবর্তন দেখা দিলে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।
২০১৪ সালের ২৪ আগস্ট তিনি পুত্র সন্তান শাহাদাতকে জন্ম দেন। শিশুটির বর্তমান বয়স ১১ বছর। শাহিনুর আক্তারে কাছে বিয়ের কাবিননামা না থাকায় স্বামী আব্বাস উদ্দীন রতন েপুত্র সন্তান ও শাহিনুরকে অস্বীকার করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন।
বিজ্ঞাপন
এরপর স্বামী ও পুত্র সন্তানের পিতৃত্বের পরিচয় আদায়ের লক্ষ্যে ২০২১ সালের ৬ অক্টোবর শাহিনুর বাদী হয়ে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী রায়পুর আদালতে একটি সি আর মামলা দায়ের করেন আব্বাস উদ্দিন রতনকে অভিযুক্ত করে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালে শাহিনুর আক্তার ও আব্বাস উদ্দীন রতনের শারীরিক সম্পর্কের কারণে শাহিনুর গর্ভবতী হন এবং একটি পুত্র সন্তানের জন্ম লাভ করেন। মসজিদের ঈমামকে দিয়ে গোপনে বিয়ে করালেও রতন তাদের কাবিন করেননি। সন্তান হওয়ার বিষয়টি জানাজানি হলে তার বাসার গৃহকর্মীর কাজ থেকে বিতাড়িত করে দেয়া হয়। মামলা দায়েরের পর আদালত ডিএনএ টেস্টের আদেশ দিলে আব্বাস উদ্দিন রতন রায়পুরে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী কয়েকজন নেতাকে দিয়ে চাপ প্রয়োগ করে মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য করা হয় শাহিনুরকে।
মামলা প্রত্যাহার করার পূর্বে কাবিনের টাকা বাবদ ৩ লাখ টাকা দেওয়া হয় শাহিনুরকে। বলা হয় শাহাদাতকে ছেলে হিসেবে মেনে নিয়েছেন এবং প্রতি মাসে ছেলের ভরণপোষণ বাবদ ৫ হাজার টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু কৌশলে মামলা প্রত্যাহার করানোর পর সন্তানের স্বীকৃতি বা ভরণপোষণ কোনোটাই এখন পর্যন্ত দেয়নি আব্বাস উদ্দীন রতন।
বিজ্ঞাপন
এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী (এপিপি) আবদুল আহাদ শাকিল পাটোয়ারী বলেন, জোরপূর্বক ও প্রতারণামূলভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে পূর্বের মামলাটি প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাই সন্তানের ভরণপোষণ আদায়ের জন্য পারিবারিক আদালতে মামলা দায়ের করা হলেও কাবিন না থাকায় সংশ্লিষ্ট আদালত মামলাটি রিজেক্ট করে দেয়। আমরা উক্ত আদেশের বিরুদ্ধে জেলা জজ আদালতে আপিল দায়ের করেছি। মামলাটি শুনানির অপেক্ষায় আছে, আমরা আশা করছি ন্যায় বিচার পাব এবং ডিএনএ টেস্ট করালেই প্রকৃত সত্য উদঘাটন করা যাবে।
জানা যায়, সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পর আব্বাস উদ্দিন রতন প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে সন্তানের পিতার জায়াগায় ভিন্ন এক ব্যাক্তির নাম ব্যাবহার করে শাহাদাৎ হোসেনের টিকা কার্ড করে। শাহীনুর নিজ সন্তানকে নিয়ে স্বাস্থ্যসেবা অফিসে গিয়ে বিস্তারিত জানালে টিকা কার্ড সংশোধন করে।
বিজ্ঞাপন
এ বিষয়ে অভিযুক্ত আব্বাস উদ্দীন রতন বলেন, শাহিনুর আমার বাসার গৃহকর্মী ছিলেন। এলাকার একটি কুচক্রী মহল শাহিনুরকে দিয়ে মিথ্যা মামলা করছে। তাকে দিয়ে আদালতের মামলা দিয়ে তা প্রত্যাহার করেও নিয়েছেন। এখন আবারও আমাকে হয়রানি করছে। আবারও প্রমাণ করব, আমি নির্দোষ।








