ঘুরে আসতে পারেন ভোলার তারুয়া দ্বীপ, যেভাবে যাবেন জেনে নিন

বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলার একটি অপরূপ দর্শনীয় স্থান হলো তারুয়া দ্বীপ, যা এখন পরিচিত তারুয়া সমুদ্র সৈকত নামেও। বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষা এই দ্বীপটি প্রায় ৪২ থেকে ৪৮ বছর আগে সাগরের পলিতে জেগে ওঠে।
বিজ্ঞাপন
তারুয়া নামের ইতিহাস
স্থানীয় জেলেরা জানায়, একসময় এখানে প্রচুর পরিমাণে তারুয়া নামক একটি মাছ ধরা পড়ত। ধারণা করা হয়, সেই মাছের নাম থেকেই এই অঞ্চলের নাম হয়ে গেছে তারুয়া।
যদিও এর সুনির্দিষ্ট ইতিহাস এখনো জানা নয়। তারুয়া দ্বীপ শুধু সমুদ্রসৈকত নয়, এটি এক বিশাল বনাঞ্চলের আবাসভূমি। প্রায় ৩১.৩১ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই দ্বীপের মধ্যে ২৮.২০ বর্গ কিমি জুড়ে রয়েছে সবুজ বন। বন বিভাগের উদ্যোগে রোপণ করা বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালায় এখন দ্বীপটি সবুজে ভরপুর।
বিজ্ঞাপন
এই দ্বীপে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী যেমন; লাল কাঁকড়া, বনবিড়াল, শিয়াল, হরিণ, সাপ, ইত্যাদি। শীতকালে অতিথি পাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত থাকে এই এলাকার চারপাশ। ঢালচর ও কুকরি-মুকরির মতো ম্যানগ্রোভ বনের কাছাকাছি হওয়ায় এখানকার পাখি ও প্রকৃতির মেলবন্ধন অনন্য এক পরিবেশ তৈরি করেছে।
তারুয়া ঘুরতে গেলে আপনি পাবেন— সৈকতের উত্তাল ঢেউ, লাল কাঁকড়ার ছোটাছুটি, ম্যানগ্রোভ বন, বালুকাময় মরুপথ, বরইতলা নামক ছায়াঘেরা খোলা মাঠ, মহিষের পাল, শিয়ালের ডাক, জেলে নৌকায় চড়ে মাছ ধরা দেখার সুযোগ।
বিজ্ঞাপন
সৈকতে প্রায় ৩০০ ফুট দীর্ঘ একটি ল্যান্ডিং স্টেশন বানানো হয়েছে, যেখানে ট্রলার ও ছোট লঞ্চ ভিড়তে পারে।
যাবেন কিভাবে তারুয়ায়?
আগে রাজধানী ঢাকা থেকে চরফ্যাশন (ভোলা) যেতে হবে। ঢাকা সদরঘাট থেকে ফারহান-৫/৬ বা তাশরিফ-৩/৪ লঞ্চগুলো প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭:৪৫ ও রাত ৮:৩০-এ বেতুয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এরপরে চরফ্যাশন থেকে চর কচ্ছপিয়া যেতে হবে অটো বা মোটরসাইকেলে যেতে হবে। এরপরে চর কচ্ছপিয়া চর থেকে কুকরি মুকরি, ঢালচর হয়ে তারুয়া যাবেন ট্রলার বা স্থানীয় লঞ্চে করে।
বিজ্ঞাপন
ভোলার বিখ্যাত খাবার
ভোলা পরিচিত মহিষের দুধের দই ও নারিকেল-চিংড়ি রান্না দিয়ে। এ ছাড়াও আছে রূপালি ইলিশ, গলদা চিংড়ি, নারকেল কাঁকড়া, খেজুরের রস (শীতকালে), জালি ডাব। সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো মহিষের দুধে তৈরি রসগোল্লা ও দই।
কোথায় থাকবেন?
বিজ্ঞাপন
তারুয়া দ্বীপে এখনো কোন হোটেল-মোটেল নেই। তবে ক্যাম্পিং করতে পারবেন (নিজস্ব তাঁবু নিয়ে)। স্থানীয় পরিবারের সঙ্গে থেকে অভিজ্ঞতা নিতে পারেন। চর কুকরি মুকরির গেস্ট হাউজে অনুমতি সাপেক্ষে থাকতে পারেন।
ভ্রমণের সময় কিছু সতর্কতা
বিজ্ঞাপন
১। রাতের বেলা একা ক্যাম্প না করা উত্তম
২। জোয়ার-ভাটার সময় জেনে নিন
৩। সমুদ্রে সতর্ক হয়ে নামুন
বিজ্ঞাপন
৪। অপরিচিতদের দেওয়া কোনো খাবার খাবেন না
৫। ময়লা ফেলা নিষেধ – প্রকৃতি পরিষ্কার রাখুন
৬। প্রয়োজনীয় পানি ও শুকনো খাবার সাথে নিন
বিজ্ঞাপন
৭। মূল্যবান জিনিসপত্র (ক্যামেরা, মোবাইল, ড্রোন) সাবধানে রাখুন
তারুয়া সমুদ্র সৈকত এখনো পর্যাপ্তভাবে বাণিজ্যিক পর্যটনের আওতায় অন্তর্ভূক্ত হয়নি, তাই এখানে আপনি পাবেন প্রকৃতির একেবারে নিজস্ব রূপ। শান্ত, নিরিবিলি পরিবেশে যারা প্রকৃতি, সাগর ও বন্যপ্রাণী ভালোবাসেন, তাদের জন্য এটা হতে পারে স্বপ্নের জায়গা। সূত্র: কুহুডাক








